সেক্স আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজে এতটাই ট্যাবু বিষয় যে এর একটা প্রমিত বাংলা প্রতিশব্দ পর্যন্ত নেই। মানব প্রজাতি ধরে রাখার মৌলিক কাজটিকে উল্লেখ করতে বিদেশি নয়ত সমাজের নিচুতলার মানুষদের মুখের ভাষা থেকে শব্দ ধার করতে হয়। এমন ভাব যেন সক্কলে ডিম ফুটে বের হয়েছি।
“ফ্রি সেক্সের দেশ ” এই শব্দগুচ্ছ যেই মানুষগুলোকে ব্যবহার করতে দেখি তারা আসলে ফ্রি সেক্স বলতে কি বুঝেন আমি জানি না। ফ্রি সেক্সের দেশ থেকে নাকি অশ্লীলতা, বেলেল্লাপনা এসে আমাদের দেশীয় মূল্যবোধকে কলুষিত করে ফেলছে। ফ্রি সেক্স শব্দগুলি বলতে বলতে তাদের চোখ চক চক করে উঠে, সম্ভবত তারা কল্পনা করেন, যেখানে ইচ্ছামতো যেকোন মেয়েকে যেভাবে খুশী সম্ভোগ করা যাবে, তাই দেশের বাইরে উড়াল দেয়ামাত্রই কোন কোন বীরপুঙ্গব সুযোগের সদ্যবহারের রাস্তা দেখেন। সেক্স এর বিনিময়ে কোন নারীকে পারিশ্রমিক বা ভরণ পোষনের অর্থ দিতে হচ্ছে না এটাই সম্ভবত তাদের কাছে ‘ফ্রি’ সেক্সের সংজ্ঞা। এইসকল চলমান শিশ্নবাহক এর ঘিলুতে এটা হিসাবে আসে না যে সেক্সের জন্য নারীর সম্মতি থাকতে হয়। বেশ্যালয়ে হয়ত অর্থের বিনিময়ে সম্মতি কেনা যায়, বিবাহিত সম্পর্কের ভিতরে বা বাইরে একটি মেয়ের সাথে বিছানায় যাবার আগে অন্তত মেয়েটিকে ভালবাসা ও সম্মানের বিনিময়েই তার সম্মতি পেতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ আসলেই এক ফরেন কনসেপ্ট। নারী মানেই রমনী, যাকে রমণ করা যায়।
অন্য দেশের কথা বাদ দেই। এই আমাদের বাংলাদেশেই কোটি কোটি পুরুষ বিয়ে করেন একটি ভোগ্যা দাসী পাবার উদ্দেশ্যে, যে সারাদিন তার ঘরবাড়ি পরিবার আর সব সদস্যদের কাজ করা, শেষে রাতে বিছানায় তাকে ফ্রি সেক্স সার্ভিস দেবে। সেখানে নারীর কামনা, চাহিদা সম্পূর্ণরূপে গৌণ। এমনকি তার সেবার বিনিময়ে স্বামী নামক শিশ্নধারীর থেকে যে ভালবাসা বা জীবনসঙ্গী হিসেবে নূন্যতম শ্রদ্ধা, সম্মান প্রাপ্য তাও বেশিরভাগক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। আদতেই এ সমাজ বিয়ের নামে একজন পুরুষের হাতে অন্তত একজন নারীকে ফ্রি সেক্স করবার লাইসেন্স তুলে দেয়। ভরণ পোষন, সম্মান উপরি পাওনা।
আর যাদের এখনও সমাজ থেকে পাওয়া গলায় দড়ি বাধা একটি সেক্স অবজেক্ট জোটেনি অথবা এই এক নারীতে লালসা মেটে না তাদের জন্যও ব্যবস্থা নেই বলা যাবে না। রাস্তায়, বাজারে, যে কোন ভীড়ে মেয়ে, মহিলা, বৃদ্ধা বা শিশু রুচিমতো ছুঁয়ে, খামচে বা চটকে দাও কোমল যে কোন অঙ্গ, যেটাতে পুরুষ তোমার কামক্ষুধা মিটে। কোন পয়সা দিতে হবে না, দিতে হবে না কোন মুচলেকাও, হবে না কোন শাস্তি, এমনকি চিল চীৎকারে সাহায্য চাইলেও সমবেত সমাজ বরং ঐ মেয়েকেই মূল্যশোধ করতে বাধ্য করবে। নেহাতই ফ্রি তে সেক্স এর চাহিদা মিটিয়ে নিতে পারবে। চমৎকার দেশ!
পশ্চিমা দেশ থেকে মুল্যবোধ আমদানি হলে কি আর এইসব সুখ কপালে থাকবে? বেঁচে থাকুক আমাদের ফ্রি সেক্সের দেশের মূল্যবোধ।
টীকাঃ
১। ইচ্ছা করেই সববয়সী ট্যাগ। বয়স যদি যৌননিগ্রীহিত হওয়ার বেলায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি না করে, তবে লেখা বা পড়ার বেলায় হয়ে কি লাভ?
২। বাংলা সিনেমার বিখ্যাত সংলাপ, ” ঘরে মা বোন নেই”। ঘরের মা বোনদের জন্য সমবেদনা। মা বোন নিয়ে বাঙালি পুরুষের যে পরিমাণ ফ্যান্টাসি গুগলে মা লিখে সার্চ দিলেই বুঝা যায়। মাদারচোদ, বাঞ্চুদ এখন আর গালি না, বিশিষ্ট চরিত্রবান লোকদের পরিচয়।